হামজার অন্তর্ভুক্তিতে বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে দেশের ১৮ কোটি মানুষ। তার অভিষেক ম্যাচে ভারতকে হারাবে বাংলাদেশ, এমনটাই ভেবেছিল তার ভক্তরা। আর তাদের ইচ্ছা পূরণে নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছেন হামজা। কিন্তু দলের বাকিরা ছিলেন এলোমেলো। প্রত্যাশা পূরণ না হলেও আশাহত হতে হয়নি বাংলাদেশকে। ভারতের বিপক্ষে গোল শূন্য ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছে হামজা-তপুরা।

কনকনে বাতাস। ঘাসে জমছিল কুয়াশা। এমন শীতল আবহাওয়ায় জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে ভারতীয় সমর্থকরা কোরাসে ‘ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া’ আওয়াজ তুলে পরিবেশ গরম করেই রাখছিলেন। গ্যালারিতে উত্তেজনা থাকলেও স্বাগতিক ভারত ম্যাচে গোল করতে পারেনি। বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে না পারায় গোলশূন্য ড্র হয়েছে।

বাংলাদেশের জার্সিতে আজ অভিষেক হয়েছে ইংলিশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে খেলা হামজা চৌধুরির। নতুন পরিবেশে হামজা প্রথম ম্যাচেই প্রাণবন্ত ছিলেন। যেখানে বল সেখানেই ছুটে গেছেন তিনি। কখনও রক্ষণের দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছেন, আবার কখনও আক্রমণে সহায়তা করেছেন। বাংলাদেশের কর্নারগুলো হামজাই নিয়েছেন। মাঝেমধ্যে হামজার বাড়ানো থ্রু পাস ভারতের রক্ষণে ত্রাসের সৃষ্টি করেছে। প্রতিপক্ষের সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ে অধিকাংশ সময় হামজাই জিতেছেন। হামজার ট্রেডমার্ক স্লাইডিং ট্যাকেলে নস্যাৎ-ও হয়েছে ভারতের আক্রমণ।

কোচ কাবরেরা আজ মূল একাদশে রাখেননি বাংলাদেশের অধিনায়ক জামাল ভূইঁয়াকে। ধারণা করা হচ্ছিল বদলি হিসেবে মাঠে নামানো হবে তাকে। তবে পুরো ম্যাচে বেঞ্চেই থাকতে হয়েছে তাকে। একাদশ নিয়ে আগে থেকেই ছিল বেশ আলোচনা। কাবরেরার এ সিদ্ধান্ত চমকে দিয়েছে অনেককেই।

একের পরে এক গোল মিসের মহড়ার পর অনুমিত ভাবেই দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ধার বাড়ায় ভারত। ৪৭ মিনিটে লেফট উইং দিয়ে আক্রমণে যাচ্ছিলেন লিস্টন কোলাচো। তাকে পেছন থেকে এসে দারুণ এক ট্যাকল করেন হামজা চৌধুরী। সেখানেই আক্রমণ প্রতিহত করেন দেশের ফুটবলের এ বড় তারকা। এভাবেই পুরো ম্যাচে বাংলাদেশের রক্ষা কবচ হয়ে ছিলেন তিনি।

৫৫ মিনিটে আবারও একই উইং দিয়ে লিস্টন ঢুকছিলেন আক্রমণে। মজিবুর রহমান জনি তাকে বাধা দিয়েও শেষমেশ বলের দখল নিতে পারেননি। শেষমেশ লিস্টন ক্রস করেন বাংলাদেশ বক্সে, তবে লাফিয়েও তার নাগাল পাননি সুনীল ছেত্রী। আজ হামজা বনাম ছেত্রীর যে লড়াইয়ের ধারণা করা হচ্ছিল ম্যাচে তেমন কিছুর দেখা মেলেনি। অবসর ভেঙে ফেরা সুনিল আজ নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি।

ম্যাচের ৬১ মিনিটেও প্রথমার্ধের মতো ভারতের গোলরক্ষকের ভুলের সুযোগ নিতে পারনেনি জনি। বিশাল কাইথ আবারও ভুল করে বল তুলে দেন জনির পায়ে। তবে জনি শট বা ক্রস কোনোটাই করতে পারেননি, তার আগেই বল হারান। ৬৫ মিনিটে দুটি পরিবর্তন আনেন ভারত কোচ মানোলো মার্কেজ। মিডফিল্ডার উদান্ত ও আয়ুশের পরিবর্তে সুরেশ ও মহেশকে মাঠে নামান তিনি।

৬৮ মিনিটে হলুদ কার্ড দেখেন হৃদয়। আপুইয়াকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন তিনি। ৭৮ মিনিটে মোরসালিন ও হৃদয়কে তুলে নেন বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। মাঠে আনেন দুই মিডফিল্ডার মোহাম্মদ সোহেল ও সোহেল রানাকে। ৮৪ মিনিটে আবারও সুযোগ পায় ভারত। এবারও হেডারের সুযোগ নষ্ট করেন ছেত্রী। এর পরের মিনিটেই ছেত্রীকে তুলে নেন ভারত কোচ। সঙ্গে ভারতের ম্যাচের সেরা ডিফেন্ডার শুভাশিসকেও তুলে নেওয়া হয়। মাঠে আনা হয় ফরোয়ার্ড ইরফান আর মিডফিল্ডার আশিককে। যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে বাংলাদেশ সুযোগ পেয়েছিল। সে সুযোগটাও কাজে লাগানো হয়নি।